Page #1
--------------------------------------------------------------------------
________________
দাদা ভগবান কথিত
চিন্তা
এই দুনিয়ায় চিন্তা করাই হল বেস্ট ফুলিশনেস (মূর্খামি)
Page #2
--------------------------------------------------------------------------
________________
দাদা ভগবান কথিত
চিন্তা
মূল গুজরাতী সংকলন ঃ ডঃ নীরুবহেন অমিন
অনুবাদ : মহাত্মাগণ।
Page #3
--------------------------------------------------------------------------
________________
প্রকাশক ঃ শ্রী অজিত সি, প্যাটেল
দাদা ভগবান আরাধনা ট্রাস্ট দাদা দর্শন, ৫, মমতাপার্ক সােসাইটি, নবগুজরাট কলেজের পিছনে উসমানপুরা, আহমেদাবাদ - ৩৮০০১৪ ফোন ঃ (০৭৯) ৩৯৮৩০ ১০০
E-mail : info@dadabhagwan.org
কপিরাইট ঃ All Rights reserved - Deepakbhai Desai
Trimandir, Simandhar City, Ahmedabad-Kalol Highway, Adalaj, Dist: Gandhinagar - 382421, Gujarat, India. No part of this book may be used or reproduced in any manner whatsoever without written permission from the holder of this copyrights.
First Edition : 2000 Copies, November 2016
ভাবমূল্য : ‘পরম বিনয়’ আর।
‘আমি কিছু জানি না এই জাগৃতি
দ্রব্যমূল্য : ১০ টাকা
মুদ্রক
ও অম্বা অফসেট,
পার্শ্বনাথ চেম্বার্স (বেসমেন্ট), আর. বি. আই-এর নিকট, উসমানপুরা, আহমেদাবাদ - ৩৮০০১৪
ফোন
ঃ (০৭৯) ২৭৫৪২৯৬৪, ৩০০০৪৮২৩/২৪
Page #4
--------------------------------------------------------------------------
________________
ত্রি-মন্ত্র
વર્તમાનતીર્થંકર
શ્રીસીમંધરસ્વામી
নমাে অরিহন্তান
নমাে সিদ্ধান
নমাে আয়রিয়ানম্
নমাে উবজ্জায়ানম্
নমাে লােয়ে সব্বসাহুন
এ্যায়সাে পঞ্চ নমুক্কারাে;
সব্ব পাবপ্লনাশনাে
মঙ্গলানম চ সব্বেসি;
পঢ়মম্ হবই মঙ্গলম্ ১ ওম নমাে ভগবতে বাসুদেবায় ২
ওম্ নমঃ শিবায় ৩
জয় সৎ চিৎ আনন্দ
Page #5
--------------------------------------------------------------------------
________________
দাদা ভগবান কে?
১৯৫৮ সালের জুন মাসের এক সন্ধ্যায় আনুমানিক ৬টার সময় ভীড়ে ভর্তি সুরত শহরের রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্ম নম্বর ৩-এর এক বেঞ্চে বসা শ্রী অম্বালাল মুলজীভাই প্যাটেলরূপী দেহমন্দিরে প্রাকৃতিকভাবে, অক্রমরূপে, বহুজন্ম ধরে ব্যক্ত হওয়ার জন্যে ব্যাকুল দাদা ভগবান পূর্ণরূপে প্রকট হলেন - অধ্যাত্মের এক অদ্ভূত আশ্চর্য্য প্রকট হল। অলৌকিকভাবে এক ঘন্টাতে ওনার বিশ্বদর্শন হল। আমি কে? ভগবান কে? জগত কে চালায়? কর্ম কি? মুক্তি কি?’ ইত্যাদি জগতের সমস্ত আধ্যাত্মিক প্রশ্নের সমস্ত রহস্য সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ হল। এইভাবে প্রকৃতি বিশ্বকে এক অদ্বিতীয় সম্পূর্ণ দর্শন প্রদান করল যার মাধ্যম হলেন গুজরাত-এর চরােতর ক্ষেত্রের ভাদরন গ্রামনিবাসী পাটীদার শ্রী অম্বালাল মুলজীভাই প্যাটেল যিনি কন্ট্রাকটরি ব্যবসা করেও সম্পূর্ণ বীতরাগী ছিলেন।
‘ব্যবসা-তে ধর্ম থাকা প্রয়ােজন, কিন্তু ধর্ম-তে ব্যবসা নয়’ এই নীতি অনুসারেই তিনি সম্পূর্ণ জীবন অতিবাহিত করেন। জীবনে কখনও উনি কারাের কাছ থেকে অর্থ নেন নি, উপরন্তু নিজের উপার্জনের অর্থ থেকে ভক্তদের তীর্থযাত্রায় নিয়ে যেতেন।
ওনার অদ্ভুত সিদ্ধজ্ঞান প্রয়ােগ দ্বারা ওনার যে রকম প্রাপ্তি হয়েছিল তেমনই অন্য মুমুক্ষুদের-ও তিনি কেবল দু’ঘন্টাতেই আত্মজ্ঞান প্রাপ্ত করাতেন। একে অক্রম মার্গ বলে। অক্রম অর্থাৎ বিনা ক্রমের আর ক্রম মানে সিঁড়ির পরে সিঁড়ি - ক্রমানুসারে উপরে ওঠা। অক্রম অর্থাৎ লিফট-মার্গ, সংক্ষিপ্ত রাস্তা।
উনি স্বয়ংই ‘দাদা ভগবান’কে? এই রহস্য জানাতেন। উনি বলতেন “যাকে আপনারা দেখছেন তিনি দাদা ভগবান নন। তিনি তাে এ.এম.প্যাটেল; আমি জ্ঞানী পুরুষ আর আমার ভিতর যিনি প্রকট হয়েছেন তিনিই ‘দাদা ভগবান’। দাদা ভগবান তাে চৌদ্দ লােকের নাথ। উনি আপনার মধ্যেও আছেন, সবার মধ্যেই আছেন; আপনার মধ্যে অব্যক্তরূপে আছেন, আর আমার মধ্যে সম্পূর্ণরূপে ব্যক্ত অবস্থায় আছেন। দাদা ভগবান’কে আমিও নমস্কার করি।”
Page #6
--------------------------------------------------------------------------
________________
সম্পাদকীয়
| চিন্তা কার হয় না? যিনি সংসার থেকে সত্য অর্থে সম্পূর্ণ আসক্তিহীন হয়েছেন তার-ই শুধু চিন্তা হয় না। বাকী সমস্ত লােকেরই চিন্তা হয়। চিন্তা কেন হয়? চিন্তার পরিণাম কি? আর চিন্তারহিত কেমন করে হওয়া যায় তার যথার্থ সমঝ (বােধ) পরমপূজ্য দাদাশ্রী বলেছেন যা এখানে প্রকাশিত হল।
চিন্তা অর্থাৎ প্রকট অগ্নি! নিরন্তর জ্বালাতেই থাকে। রাতে ঘুমােতে পর্যন্ত দেয় । ক্ষুধা-তৃষ্ণা নষ্ট করে দেয়। কত রকমের রােগকে নিমন্ত্রণ দেয়। শুধু তাই নয়, পরজন্মে তির্য্যগতির কারন হয়। এই জন্ম আর সামনের জন্ম, দুই-ই নষ্ট করে দেয়।
চিন্তা তাে অহঙ্কার। কিসের আধারে সমস্ত কিছু চলছে সেই প্রাণীদের জীবনযাত্রা মান যা বিজ্ঞান না বােঝার কারণে নিজের মাথার উপর সবকিছু নিয়ে কর্তা হয়ে বসে আর ভুগতে থাকে। ভােগাটা (সুখ-দুঃখের প্রভাব) কেবল অহঙ্কারের হয়। কর্তা-ভােক্তাভাব শুধু অহঙ্কারের হয়।
চিন্তা করলে কাজ বিঘ্নিত হয়, এটাই প্রকৃতির নিয়ম। চিন্তামুক্ত হলে ওই কাজ স্বয়ংই সুষ্ঠুভাবে হয়।।
বড়-বড় লােকেদের বড়-বড় চিন্তা, বাতানুকূল ঘরেও চিন্তায় ডুবে থাকে। মজুরদের চিন্তা হয় না, ওরা শান্তিতে ঘুমায় আর এই মহাজনদের তাে ঘুমের ওষুধ নিতে হয়! জানােয়ারদের কখনও চিন্তা হয় ? | মেয়ে দশ বছরের, তখন থেকেই তার বিয়ের চিন্তা শুরু হয়ে যায়। আরে, ওর জন্যে ছেলের জন্ম হয়ে গেছে কি হতে বাকী আছে? | যারা চিন্তা করে তাদের ঘরে লক্ষ্মী থাকেন না। চিন্তা থেকে বাধা-কর্মের বন্ধন হয়।
Page #7
--------------------------------------------------------------------------
________________
চিন্তা কাকে বলে? বিচার-বিবেচনা করতে কোন অসুবিধা নেই কিন্তু যখন সেই বিচারের চক্কর চলতেই থাকে তখন থেকে চিন্তা শুরু হয়ে যায়। বিচারের কারণে দমবন্ধ করা পরিস্থিতি হলে তখন সেখানেই থেমে যাওয়া উচিৎ।
বাস্তবে ‘কর্তা কে’ - এটা না বোঝার কারণে চিন্তা হয়। কর্তা সায়েন্টিফিক সারকামস্ট্যানশিয়াল এভিডেন্স, জগতে কোন স্বতন্ত্র কর্তা নেই, সব-ই নিমিত্ত মাত্ৰ ৷ চিন্তা চিরতরে কি করে দূর হবে? কর্তাপদ ছাড়লে! কর্তাপদ কি করে ছাড়া যাবে? আত্মজ্ঞান প্রাপ্ত করলে তবে।
-ডঃ নীরুবেন অমিন
Page #8
--------------------------------------------------------------------------
________________
আত্মজ্ঞান প্রাপ্তির প্রত্যক্ষ লিস্ক
‘আমি তাে কিছু লােককে নিজের হাতে সিদ্ধি প্রদান করে যাব। তারপরে অনুগামীর প্রয়ােজন আছে না নেই? পরের লােকেদের রাস্তা প্রয়ােজন আছে কি না?
- দাদাশ্রী
পরমপূজ্য দাদাশ্রী গ্রাম-শহরে দেশ-বিদেশে পরিভ্রমণ করে মুমুক্ষুজনেদের সৎসঙ্গ আর আত্মজ্ঞান প্রাপ্তি করাতেন। দাদাশ্রী তার জীবদ্দশাতেই পূজ্য ডাঃ নীরুবেহন আমিন (নীরুমা)-কে আত্মজ্ঞান প্রাপ্ত করানাের জ্ঞানসিদ্ধি প্রদান করেছিলেন। দাদাশ্রীর দেহত্যাগের পর নীরুমা একইভাবে মুমূক্ষুজনেদের সৎসঙ্গ আর আত্মজ্ঞান প্রাপ্তি নিমিত্তভাবে করাতেন। দাদাশ্রী পূজ্য দীপকভাই দেসাইকে সৎসঙ্গ করার সিদ্ধি প্রদান করেছিলেন। নীরুমা-র উপস্থিতিতেই তার আশীর্বাদে পূজ্য দীপকভাই দেশ-বিদেশে অনেক জায়গায় গিয়ে মুমূক্ষুদের আত্মজ্ঞান করাতেন যা নীরুমা-র দেহবিলয়ের পর আজও চলছে। এই আত্মজ্ঞান প্রাপ্তির পর হাজার হাজার মুমুক্ষু সংসারে থেকে, সমস্ত দায়িত্ব পালন করেও আত্মরমণতার অনুভব নিয়ে থাকেন।
পুস্তকে মুদ্রিত বাণী মােক্ষলাভার্থীর পথপ্রদর্শক হিসাবে অত্যন্ত উপযােগী প্রমাণিত হবে, কিন্তু মােক্ষলাভ-এর জন্য আত্মজ্ঞান প্রাপ্ত হওয়া অপরিহার্য। অক্রম মার্গের দ্বারা আত্মজ্ঞান প্রাপ্তির পথ আজও উন্মুক্ত আছে। যেমন প্রজ্বলিত প্রদীপই শুধু পারে অন্য প্রদীপকে প্রজ্বলিত করতে, তেমনই প্রত্যক্ষ আত্মজ্ঞানীর কাছে আত্মজ্ঞান লাভ করলে তবেই নিজের আত্মা জাগৃত হতে পারে।
[৩]
Page #9
--------------------------------------------------------------------------
________________
নিবেদন
আত্মবিজ্ঞানী শ্রী অম্বালাল মুলজীভাই প্যাটেল, যাঁকে লোক দাদা ভগবান নামে জানে, তাঁর শ্রীমুখ-নিঃসৃত অধ্যাত্ম তথা সাংসারিক জ্ঞান সম্পর্কিত বাণী রেকর্ড করে, সংকলন তথা সম্পাদনা করে পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়।
জ্ঞানীপুরুষ পরমপূজ্য দাদা ভগবানের শ্রীমুখে অধ্যাত্ম তথা সংসার-ব্যবহারের বিভিন্ন বিষয়ে নির্গত সরস্বতীর অদ্ভূত সংকলন এই আপ্তবাণী যা নবীন পাঠকের নিকট বরদানস্বরূপ। প্রস্তুত অনুবাদে বিশেষ লক্ষ্য রাখা হয়েছে যে দাদাজীর বাণী শোনার অনুভব যাতে পাঠকের হয়। এই কারণে কোন কোন স্থানে অনুবাদের বাক্যবিন্যাস ব্যাকরণগত ভাবে ত্রুটিপূর্ণ মনে হতে পারে কিন্তু সেই স্থলে মূল বক্তব্য উপলব্ধি করে পাঠ করলে অধিক লাভদায়ক হবে।
জ্ঞানীপুরুষের বাণী যথাযথভাবে অনুবাদ করার প্রচেষ্টা করা হয়েছে। অনুবাদ সম্বন্ধীয় ত্রুটির জন্য অনুবাদক আপনাদের ক্ষমাপ্রার্থী।
Page #10
--------------------------------------------------------------------------
________________
চিন্তা
চিন্তা আসে কোথা থেকে?
দাদাশ্রী ও কখনাে চিন্তা করেছাে কি?
প্রশ্নকর্তা ও চিন্তা তাে মানুষের স্বভাব, সেইজন্যে কোন না কোনরূপে চিন্তা তাে হয়ই।
দাদাশ্রী ও মানুষের স্বভাব এমন যে যদি কেউ ওকে থাপ্পড় মারে তাহলে সেও তাকে থাপ্পড় মারবে। কিন্তু যদি কেউ বিচারশীল হয় তাহলে সে চিন্তা করবে যে আইন আমার নিজের হাতে নেওয়া অনুচিৎ। কিছু লােক তাে আইন নিজের হাতে নিয়ে নেয়। একে অপরাধ বলে। মানুষ চিন্তা কি করে করতে পারে? প্রত্যেক ভগবান এরকমই বলে গেছেন যে কোন প্রকার চিন্তা করবে । সমস্ত দায়িত্বভার আমার মাথায় দাও।।
প্রশ্নকর্তা ও কিন্তু বলা আর তা ব্যবহারে আনা, দুইয়ের মধ্যে বিস্তর। ব্যবধান।
দাদাশ্রী ঃ না, আমি ব্যবহারে ছাড়তে বলছি না। এ তাে এই সম্পর্কে বলছি। এমনি চিন্তা কিছু ছাড়া যায় না। কিন্তু চিন্তা করতে না চাইলেও চিন্তা হয়ে যায় সবারই।
এখন, যখন এই চিন্তা হয় তখন ওষুধ কি লাগাও ? চিন্তার ওষুধ পাওয়া যায় না?
[ ৫ ]
Page #11
--------------------------------------------------------------------------
________________
যেখানে চিন্তা, সেখানে অনুভূতি কোথায়?
| প্রশ্নকর্তাঃ চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসার জন্যে ভগবানের আশীর্বাদ চাই কি এর থেকে কবে মুক্তি পাব, এর জন্যে ভগবান, ভগবান’ করে এরই মাধ্যমে আমি আগে যেতে চাই। তবুও আমার নিজের ভেতরের ভগবানের কোন অনুভূতি হয় না।
দাদাশ্রীঃ কি করে অনুভূতি হবে? চিন্তা থাকলে অনুভূতি হয় না! চিন্তা আর অনুভূতি দুটো একসাথে হয় না। চিন্তা বন্ধ হলে অনুভূতি হবে।
প্রশ্নকর্তাঃ চিন্তা কি করে বন্ধ হবে ? দাদাশ্রী ঃ এখানে সৎসঙ্গে থাকলে। সৎসঙ্গে এসেছাে কখনাে? প্রশ্নকর্তা ও অন্য জায়গায় সৎসঙ্গে যাই।
দাদাশ্রী ঃ যে সৎসঙ্গে গেলে চিন্তা বন্ধ হয় না সেই সৎসঙ্গ ছেড়ে দেওয়া উচিৎ। নইলে সৎসঙ্গে গেলে চিন্তা বন্ধ হওয়া চাই-ই।
প্রশ্নকর্তাঃ যতক্ষণ সেখানে বসি ততক্ষণ শান্তি থাকে।
দাদাশ্রী ঃ না, ওকে শান্তি বলে না; ওতে শান্তি নেই। এরকম শান্তি তাে গল্প শুনলেও হয়ে যায়। সত্যিকারের শান্তি তাে সবসময়ের জন্যে থাকবে, চলে যাবে না। তাহলে যেখানে চিন্তা হয় সেরকম সৎসঙ্গে যাওয়াই কিসের জন্যে? সৎসঙ্গ যারা করায় তাদের বলে দেবে কি, “ভাই, আমার তাে চিন্তা হয়, সেইজন্যে আর আমি এখানে আসব না; নয়তাে এমন কিছু নিদান দাও। যাতে চিন্তা না হয়।
প্রশ্নকর্তা : অফিসে যাই, ঘরে যাই - তাও কোথাও মন লাগে না। দাদাশ্রী ঃ অফিসে তাে আমরা চাকরীর জন্যে যাই আর বেতন তাে চাই কি? ঘর-গৃহস্থী তাে চালাতে হবে, ঘর ছেড়ে দেওয়া যাবে না, চাকরীও ছাড়া যাবে না। কিন্তু যেখানে চিন্তা মেটে না শুধু সেই সৎসঙ্গ ছেড়ে দিতে হবে। নতুন কোন দ্বিতীয় সৎসঙ্গ খুঁজবে, তৃতীয় সৎসঙ্গে যাবে। সৎসঙ্গ কয়েক প্রকারের হয় পরন্তু সৎসঙ্গ থেকে চিন্তা দূর হওয়া চাই। তুমি অন্য কোন সৎসঙ্গে যাও নি ?
Page #12
--------------------------------------------------------------------------
________________
প্রশ্নকর্তা : কিন্তু আমাকে এরকম বলা হয়েছে যে ভগবান তোমার ভিতরেই আছেন । শান্তি তোমার ভিতর থেকেই আসবে, বাইরে ঘুরে বেড়ানো বন্ধ করে দাও।
দাদাশ্রী ঃ হ্যাঁ, ঠিক আছে।
প্রশ্নকর্তা ঃ কিন্তু ভিতরে যে ভগবান আছেন তাঁর কিছুমাত্র অনুভব-ও হয় না ।
দাদাশ্রী : চিন্তা থাকলে অনুভব হয় না। চিন্তা হলে যদি কোন অনুভব হয়েও থাকে তা চলে যাবে। চিন্তাকে তো একপ্রকার অহংকার বলে। ভগবান বলেন যে “তুই অহংকার করছিস তো আমার কাছ থেকে চলে যা।' যার ‘এটা আমিই চালাচ্ছি' এরকম চালানোর অহংকার আছে সেই চিন্তা করে। যার ভগবানের উপর একটুও বিশ্বাস নেই, সেই চিন্তা করে ৷
প্রশ্নকর্তা ঃ ভগবানের উপর বিশ্বাস তো আছে ।
দাদাশ্রী : বিশ্বাস থাকলে এরকম করবেই না। ভগবানের ভরসায় ছেড়ে দিয়ে শান্তিতে ঘুমাবে। তাহলে চিন্তা আর কে করবে? এইজন্যে ভগবানের উপর ভরসা রাখো। ভগবান তোমার কিছু কিছু সামলান কি না? ভোজন করার পরে কি চিন্তা করো? পাচকরস পড়ল কি না, পিত্ত পড়লো কি না, এইসব চিন্তা করো না? এর থেকে রক্ত তৈরী হবে কি না, এর থেকে মল তৈরি হবে কি না-- এরকম চিন্তা করো? অর্থাৎ এই ভিতরে অনেক কিছু চালানোর আছে, বাইরে কি চালানোর আছে যে চিন্তা করো? তাহলে ভগবানের তো খারাপ লাগবে, না কি! অহংকার করলে চিন্তা হবে। চিন্তা করে এরকম মানুষ অহংকারী বলে। এক সপ্তাহ ভগবানকে সমর্পণ করে চিন্তা করা ছেড়ে দাও। তারপর এখানে কোন দিন ভগবানের সাক্ষাৎকার করিয়ে দেব যাতে চিন্তা বরাবরের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।
চিন্তা মানে প্রকট অগ্নি
অতএব এ সমস্ত বুঝতে হবে। লাগানোর ওষুধ খেয়ে নিলে কি অবস্থা হবে? এরা সবাই লাগানোর ওষুধ খেয়ে ফেলেছে, নইলে মানুষের চিন্তা হয় কি? হিন্দুস্থানের মানুষের কখনো চিন্তা হয়? তোমার চিন্তা করার সখ আছে ?
[ 7 ]
Page #13
--------------------------------------------------------------------------
________________
প্রশ্নকর্তা ঃ না, শান্তি চাই।
দাদাশ্রী ও চিন্তা-কে তাে অগ্নি বলে। এরকম হবে আর সেরকম হবে। কোন কালে যখন কোন সংস্কারী মানুষ হওয়ার সৌভাগ্য হয় আর তখন চিন্তায় ডুবে থাকে, তাহলে মনুষ্যপন (পুনরায় মনুষ্যজন্ম লাভ) চলে যায়। এ কত বড় বিপদ? যদি তােমার শান্তি চাই তাে আমি তােমার চিন্তা চিরকালের জন্যে বন্ধ করে দিচ্ছি।
যখন থেকে চিন্তা বন্ধ হয় তখন থেকে বীতরাগ ভগবানের মােক্ষমার্গের শুরু। বীতরাগ ভগবানকে যখন দর্শন করবে তখন থেকেই চিন্তা বন্ধ হওয়া উচিৎ। কিন্তু দর্শন করতেও জানে না। দর্শন করা তাে জ্ঞানীপুরুষ শিখিয়ে দেন যে এইভাবে দর্শন করাে, তাহলে কাজ হবে। এই চিন্তাতে তাে আগুন জ্বলতে থাকে। মিষ্টি আলু দেখেছাে? মিষ্টি আলু আগুনে রেখে পােড়ালে যেমন হবে সেইরকমই হয়।।
জ্ঞানীর কৃপায় চিন্তা থেকে মুক্তি প্রশ্নকর্তা ও তাে চিন্তামুক্ত হওয়ার জন্যে কি করতে হবে ?
দাদাশ্রীঃ তােমার মত এই ভাইও অনেক জায়গায় গেছে কিন্তু ফল পায় নি। তখন ও কি করলাে তা ওকে জিজ্ঞাসা করাে। ওর একটাও চিন্তা আছে কি? এখন ওকে গালিগালাজ করলেও অশান্তি হবে কি? জিজ্ঞাসা করাে ওকে।
প্রশ্নকর্তা ও কিন্তু চিন্তা বন্ধ করার জন্যে আমাকে কি করতে হবে ?
দাদাশ্রীঃ ‘জ্ঞানীপুরুষ’ -এর কাছে এসে কৃপা নিয়ে যাও। তাহলে চিন্তা বন্ধ হয়ে যাবে আর সংসারও চলতে থাকবে।
চিন্তা যায় তখন থেকে সমাধি চিন্তা না হলে সত্যিই ঝাট দূর হয়। চিন্তা হয় না, ওয়রীজ (দুশ্চিন্তা) হয় না আর উপাধি (বাইরে থেকে আসা দুঃখ) তে সমাধি থাকে তাহলে বুঝবে যে সত্যিই ঝঞ্ঝাট চলে গেছে।
[ ৮ ]
Page #14
--------------------------------------------------------------------------
________________
প্রশ্নকর্তা ও এরকম সমাধি আনতে চাইলেও আসে না।
দাদাশ্রী ঃ এ তাে এমনি এমনি আনতে চাইলে আসবে না। জ্ঞানীপুরুষ ঝঞ্ঝাট মিটিয়ে দেন, পূর্ণ শুদ্ধ করে দেন, তখন নিরন্তর সমাধি থাকে। চিন্তা হয় না এরকম জীবন যদি হয় তাে তাকে ভালাে বলবে না? প্রশ্নকর্তা ও সে তাে ভালােই বলবে না!
দাদাশ্রীঃ আমি চিন্তামুক্ত জীবন বানিয়ে দেব। আর তােমার চিন্তা থাকবে না। এই কালের এটা একটা মহান আশ্চর্য্য। এই কালে এরকম হয় না, কিন্তু দেখাে হয়েছে না!
‘স্বয়ং’ই পরমাত্মা, তাহলে চিন্তা কেন? কথাটা শুধু বুঝতে হবে। তুমিও পরমাত্মা, ভগবান-ই, তাহলে কেন দুশ্চিন্তা করছাে? চিন্তা কেন করছাে? এই সংসার এক মুহূর্তের জন্যেও চিন্তা করার মত নয়। এখন চিন্তা করে কোন সেফ সাইড (নিরাপত্তা) হতে পারে
, কারন যে সেফ সাইড ন্যাচারাল (স্বাভাবিক) ছিল তাতে তুমি ঝঞ্ঝাট তৈরী করেছাে। তাহলে এখন কেন চিন্তা করছাে? ঝঞ্ঝাট এলে তার সম্মুখীন হও। আর সমাধান করাে।
| প্রশ্নকর্তাঃ যদি আমি প্রতিকূলতার সম্মুখীন হই, তাকে আটকাই, প্রতিরােধ করি, তাে তাহলে অহংকার বাড়বে। | দাদাশীঃ চিন্তা করার বদলে সম্মুখীন হওয়া ভালাে। চিন্তার অহংকারের তুলনায় প্রতিরােধ করার অহংকার ছােট। ভগবান বলেছেন, যে, এই পরিস্থিতিতে সম্মুখীন হও, উপায় বার করাে কিন্তু চিন্তা করাে না।
চিন্তা যে করে তার দুটো সাজা ভগবান বলেন যে যারা চিন্তা করে তাদের দুটো শাস্তি আর যারা চিন্তা করে না তাদের একটাই শাস্তি। আঠারাে বছরের একমাত্র ছেলে মারা যায়, তারপরে যত চিন্তা করে, যত দুঃখ পায়, মাথা কোটে আর যা কিছু করে তার দুটো শান্তি। আর সেসব কিছু যদি না করে তাে তার একটাই সাজা। ছেলে
| [ ৯ ]
Page #15
--------------------------------------------------------------------------
________________
মারা গেছে এটাই সাজা। আর যদি ঠোকাঠুকি করে মাথা ফাটায় তা অতিরিক্ত সাজা। আমি এই দুই সাজার মধ্যে কখনো পড়ি না। এইজন্যে আমি সবাইকে বলেছি যে পাঁচ হাজার টাকা পকেটমার হয়ে গেলেও ‘ব্যবস্থিত’ (অর্থাৎ সায়েন্টিফিক সারকামস্ট্যানশিয়াল এভিডেন্স) বলে এগিয়ে যাবে আর নিশ্চিন্তে ঘরে যাবে।
এই একটা সাজা আমার নিজের হিসাব, তাই চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ নেই। সেইজন্যে, যা হয়ে গেছে তাকে ‘যা হয়েছে তাই ঠিক’ এইরকম বলো! যার চিন্তা সেই কাজ নষ্ট হয়
প্রকৃতি বলছে যে কাজ না হলে চেষ্টা করো, খুব চেষ্টা করো কিন্তু চিন্তা করো না । কারণ চিন্তা করলে ওই কাজে ধাক্কা লাগে আর যে চিন্তা করছে সেই লাগাম নিজের হাতে নিয়ে নেয়। ‘মনে করে আমিই চালাচ্ছি' এইভাবে লাগাম নিজের হাতে নেয়। এতে দোষ হয়ে যায়।
পরসত্তা-র উপযোগ করলে চিন্তা হয়। বিদেশের উপার্জন বিদেশেই থেকে যাবে। এই বাড়ি-গাড়ি, কারখানা, স্ত্রী-সন্তান সব এখানেই ছেড়ে যেতে হবে। ওই শেষ স্টেশনে তো কারোর বাপেরও কিছু চলবে না। শুধু পূণ্য আর পাপ সাথে নিয়ে যেতে দেবে। অন্য সরল ভাষায় বলি যে এখানে যে যে দোষ করেছো সেই সব ধারা সাথে যাবে। পাপের রোজগার এখানেই থাকবে আর মোকদ্দমা চলবে। তারপর দোষের ধারা অনুযায়ী নতুন শরীর প্রাপ্ত করে, নতুনভাবে রোজগার করে ঋণ শোধ করতে হবে। সেইজন্যে ভাই প্রথম থেকেই সোজা হয়ে যাও না! স্বদেশ (আত্মা)-এ তো অনেক সুখ, কিন্তু স্বদেশ তো দেখোই নি না!
পাওনা মনে আসে সেখানে...
রাত্রে সবাই বলছে, ‘এগারোটা বেজে গেছে, এখন শুয়ে পড়ো।' শীতের দিন আর তুমি মশারিতে ঢুকে পড়েছো। ঘরের সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। মশারীতে ঢুকে তোমার মনে পড়ল যে, ‘একজনের কাছে তিন হাজার টাকার বিল বাকী আছে আর সময় পুরো হয়ে গেছে। আজ সই করিয়ে রাখলে টাকাটা পাওয়া
[ ১০ ]
Page #16
--------------------------------------------------------------------------
________________
যেত।' রাতারতি কি সই করানো যাবে? যাবে না তো? তাহলে শান্তিতে শুয়ে পড়লে তোমার কি ক্ষতি হবে?
চিন্তার মূল কারণ
মন জ্বলতে থাকে এরকম চিন্তা তো কোন কাজের নয়। এ তো শরীরের ক্ষতি করে আর যে বস্তু আমার কাছে আসতে পারত তাতে বিঘ্ন ঘটায় ৷ চিন্তা থেকেই এরকম সংযোগ তৈরী হয়ে যায়। ভাল-মন্দ অথবা এই ধরণের বিচার করা উচিৎ, কিন্তু চিন্তা কেন? একে বলা হয় ইগোইজম্ (অহংকার)। এরকম ইগোইজম্ হওয়া উচিৎ নয়। ‘আমি একজন কেউ-কেটা আর আমিই চালাচ্ছি' এর থেকে তার চিন্তা হয় আর ‘আমি থাকলে তবেই এই কেসের সমাধান হবে' এর থেকে চিন্তা হতেই থাকে। এইজন্যে ইগোইজম-এর অংশটা অপারেশন করে বাদ দেবে, আর তারপরে যে ভালমন্দের বিচার থাকে তাতে কোনও ক্ষতি নেই। ও তো রক্তে জ্বালা ধরায় না। নয়তো চিন্তা তো রক্তে জ্বলন ধরায়, মনকে জ্বালায়। চিন্তা হচ্ছে, সেই সময় বাচ্চা কিছু বলতে এলে তার উপরেও ক্রোধ করো অর্থাৎ সমস্ত দিক থেকে ক্ষতি করছে। এই অহংকার এমনই জিনিষ যে পয়সা থাক বা না থাক, কিন্তু কেউ যদি বলে যে, ‘এই চান্দুভাই আমার সব নষ্ট করেছে', তখন অপার চিন্তা আর অপার উপাধি হয়ে যায়। আর সংসার তো আমি যদি খারাপ কিছু নাও করি তাহলেও বলবে!
চিন্তার পরিণাম কি ?
এই সংসারের বাই-প্রোডাক্ট অহংকার আর তা সহজাত অহংকার । এতে সংসার সহজে চালানো যায়। ওখানে তো চিন্তার পুরো কারখানাই তৈরী করে দিয়েছে আর অহংকারকে বাড়িয়েছে আর এত বাড়িয়েছে যাতে চিন্তার কোন সীমা নেই। অহংকারকেই বাড়িয়েছে। সহজ অহংকার থেকে, নর্মাল অহংকার থেকে সংসার চলে। কিন্তু ওখানে অহংকারকে বাড়িয়ে নিয়ে তারপরে এত বয়সে চাচা বলেন ‘আমার চিন্তা হচ্ছে।' এই চিন্তার পরিণাম কি? এর পরে জানোয়ার-গতি প্রাপ্ত হবে। এইজন্যে সাবধান হয়ে যাও। এখনই সাবধান হওয়া উচিৎ। যতক্ষণ মনুষ্যযোনিতে আছ ততক্ষণ সাবধান হও, নয়তো যেখানে চিন্তা হবে সেখানে তো জানোয়ার গতির ফল পাবে।
[ ১১ ]
Page #17
--------------------------------------------------------------------------
________________
ভক্ত তাে ভগবানের সাথেও ঝগড়া করে ভগবানের প্রকৃত ভক্তের যদি চিন্তা হয় তাে সে ভগবানের সাথেও ঝগড়া করে, “হে ভগবান, আপনি বারণ করেন তাও কেন আমার চিন্তা হয়। যে। ভগবানের সাথে ঝগড়া করে না সে প্রকৃত ভক্ত নয়। যদি কোন উপাধি আসে তাে তােমার ভিতরে ভগবান বসে আছেন, তাকে বকাবকি করবে, ধমকাবে। তাকেই প্রকৃত প্রেম বলে যা ভগবানের সাথেও ঝগড়া করায়। আজকাল তাে ভগবানের প্রকৃত ভক্ত পাওয়াও মুস্কিল। সবাই নিজের নিজের মতলবে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
শ্রীকৃষ্ণ ভগবান বলেছেন, ‘জীব তু সীদ নে সােচনা করে, কৃষ্ণ নে করবু হােয় তে করে।' (জীব তুই কেন চিন্তা করিস, কৃষ্ণের করার হলে করবে)
| তাতে এইসব লােক কি বলে? কৃষ্ণ ভগবান তাে বলেন, কিন্তু এই সংসার চালাতে হলে চিন্তা না করে কি করে চালানাে যায়? এইজন্যে লােকজন চিন্তার কারখানা খুলেছে। সে জিনিষও বিক্রী হয় না। কোথা থেকে বিক্রী হবে? যেখানে বিক্রী করতে যাবে সেখানেও ওর কারখানা তাে আছেই না! এই সংসারে এমন একটা মানুষ খুঁজে আনাে যার চিন্তা হয় না।
একদিকে বলবে ‘শ্রীকৃষ্ণ শরণং মম’ আর যদি শ্রীকৃষ্ণের শরণ নিয়েছাে তাে আবার চিন্তা কিসের? মহাবীর ভগবানও চিন্তা করতে মানা করেছেন। উনি তাে একটা চিন্তার ফল তিৰ্য্যকগতি বলেছেন। চিন্তা তাে সবথেকে বড় অহংকার। এই সব আমিই চালাচ্ছি’ এই ভাব প্রচন্ডভাবে থাকে, তার ফলস্বরূপ চিন্তার জন্ম হয়।
একই কথা সবাই বলে | চিন্তা তাে আর্তধ্যান দুশ্চিন্তা। এই শরীর যতটা শাতা-অশাতা (সুখ-দুঃখ) -র উদয় নিয়ে এসেছে ততটা ভােগ হলে তবেই মুক্তি পাওয়া যাবে। এইজন্যে কারাের দোষ দেখাে না। কারাের দোষের প্রতি দৃষ্টি দেবে না আর নিজের দোষ থেকেই বন্ধন এরকম বুঝে নাও। তুমি কোন কিছু পরিবর্তন করতে পারবে না। এইজন্যই শ্রীকৃষ্ণ ভগবান বলেছেন, “জীব তুই কেন চিন্তা করি, কৃষ্ণ
[১২]
Page #18
--------------------------------------------------------------------------
________________
যা করার করবে। তাতে জৈনরা বলে, ‘এ তাে কৃষ্ণ ভগবান বলেছেন, মহাবীর ভগবান এরকম বলেন নি। মহাবীর ভগবান এর উপর বলেছেন। ‘রাই মাত্র ঘট-বড় নহী, দেখা কেবলজ্ঞান, ইয়হ নিশ্চয়কর জানিয়ে, ত্যজিয়ে আর্তধ্যান। চিন্তা আর আর্তধ্যান ত্যাগ করাে। কিন্তু ভগবানের কথা মানবে তবে না? না মানলে তাকে আমি কিভাবে ধমকাবাে? আমাকে এরকম বলেছিল। তাে আমি মেনে নিয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম, হ্যা ভাই, কিন্তু এ তাে একটাই এরকম কথা তাই আমি অন্য জায়গায় খুঁজলাম। যা ভগবান মহাবীর বলেছেন, তাই কৃষ্ণ ভগবান বলেছেন। তখন আমি বললাম এ তাে মিলে যাচ্ছে, তবুও যদি কারাের ভুল হচ্ছে তাে আরও পরখ করাে।
| এই পরিস্থিতিতে সহজানন্দ স্বামী বলেছেন, “আমার ইচ্ছা বিনা, কারাের দ্বারা তৃণ-ও ভাঙা যায় না। অহাে! আপনি এত শক্তিশালী! আমাকে ছাড়া একটা তৃণও ভাঙবে না? তখন বলে, চলাে, তিনজন মিলে গেছে। তাে আমি বললাম, আরও মেলাতে হবে।
এতে কবীর সাহেব কি বলেছেন, ‘প্রারব্ধ প্রথমে তৈরী হয়, পরে তৈরী হয় শরীর, কবীর আশ্চৰ্য্য এতে হচ্ছে যে মন ধৈর্য্য ধরে না। মনের স্থিরতা থাকে না এটাই বড় আশ্চর্য্য। সবার কথাই মিলে যেতে থাকল, সবাইকে প্রশ্ন করতে থাকলাম। আপনি কি বলছেন? বলুন, বলে ফেলুন।
হ্যা, একজনের ভুল হতে পারে কিন্তু বীতরাগদের তাে ভুল বলতেই পারি । যারা লিখেছে তাদের ভুল হয়ে থাকতে পারে এরকম হতে পারে কিন্তু বীতরাগদের ভুল হয়েছে এরকম তাে কখনই মানব না। আমাকে যতই ঘুরিয়ে বােঝানাে হােক না কেন বীতরাগদের ভুল আমি কখনই মানি নি। জন্ম থেকে, শৈশব থেকে বৈষ্ণব হওয়া সত্ত্বেও আমি এঁদেরকে ভুল বলে মেনে নিই নি। কারণ এনারা পরম জ্ঞানীপুরুষ! যাদের নাম স্তবগান করলেই কল্যাণ হয়ে যায়। আর দেখাে, আমার দশা দেখাে! রাই-মাত্ৰকম-বেশী নয়। অরে! একটা রাইয়ের দানা দেখেছাে তুমি? তখন বলে, নাও! রাইয়ের দানা কি দেখিনি। একটা রাই এর দানার মত পার্থক্যও হওয়ার নয় আর দেখে লােকে কোমর বেঁধে যতক্ষণ পর্যন্ত জাগতে পারে ততক্ষণ জেগে থাকে। শরীরকে টানতেটানতে জেগে থাকে আর হার্টফেল-এর প্রস্তুতি করে।
[১৩]
Page #19
--------------------------------------------------------------------------
________________
ওনার কাছে, মূল্য কার
এক বৃদ্ধ চাচা এসেছিলেন আর আমার পায়ে পড়ে খুব কান্নাকাটি করলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “কিসের দুঃখ আপনার?’ তো বললেন, ‘আমার গহনা চুরি হয়ে গেছে, ফিরে পাচ্ছি না, এখন কবে ফিরে পাব?' তখন আমি ওনাকে বললাম, “ওই গহনা কি সঙ্গে নিয়ে যেতেন?” তো বললেন, ‘না, সঙ্গে নিয়ে যেতে পারব না। কিন্তু আমার গহনা যা চুরি হয়ে গেছে তা ফেরৎ কবে পাব?” আমি বললাম, ‘আপনার চলে যাওয়ার পরে আসবে।' গহনা গেছে তার জন্যে এত হায়, হায়, হায়। আরে যা গেছে চিন্তা তো করাই উচিৎ নয়। হয়তো আগামী দিনের, ভবিষ্যতের চিন্তা করতে পারে, সে তো আমি বুঝি যে বুদ্ধিমান লোকের চিন্তা তো হতেই পারে, কিন্তু যা চলে গেছে তারও চিন্তা? আমাদের দেশে এরকম চিন্তা হয়। ক্ষণেক আগে যা হয়েগেছে তার চিন্তা কি? যার কোন উপায় নেই তার কিসের চিন্তা? যে কোন বুদ্ধিমান-ই বুঝবে যে আর কোন উপায় নেই, তাই ওর চিন্তা ছেড়ে দেওয়া উচিৎ।
ওই চাচা কান্নাকাটি করছিলেন কিন্তু আমি দু'মিনিটে তাকে বদলে দিলাম । তখন তো ‘দাদা ভগবান কে অসীম জয়জয়কার হো' বলতে থাকলেন। আজ সকালেও রণছোড়জীর মন্দিরে দেখা হল, তখনও বলে উঠলেন, 'দাদা ভগবান ?” আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, ওই।' আবার বললেন, ‘সারা রাত তো আপনার নামই নিয়েছি।' এনাকে তো এদিকে ফেরাতে চাইলে এদিকে ফিরবেন, এনার মধ্যে এরকম কিছু নেই।
প্রশ্নকর্তা ঃ আপনি ওনাকে কি বললেন?
দাদাশ্রী : আমি বললাম, ‘এই গহনা ফিরে আসবে তা নয়, তবে হ্যাঁ, অন্য রকমভাবে গহনা আসবে।’
প্রশ্নকর্তা : আপনাকে পেয়েছে অর্থাৎ বড় গহনা-ই পেয়ে গেছে না! দাদাশ্রী ঃ হ্যাঁ, এ তো আশ্চৰ্য্য! কিন্তু এটা উনি কিভাবে বুঝবেন? ওনার তো গহনার সামনে এর কোন মূল্যই হবে না। আরে ওনার চা খাওয়া দরকার আর আমি ওকে যদি বলি, ‘আমি আছি তো, চা-য়ের কি দরকার?' তাতে উনি বলবেন, ‘আমার চা না খেলে স্বস্তি হয় না, আপনি থাকুন আর না থঅকুন ৷” এর মূল্য কার কাছে? যার ইচ্ছা তার কাছে।
[ ১৪ ]
Page #20
--------------------------------------------------------------------------
________________
প্রকৃতির অতিথির ঠাটবাট তাে দ্যাখাে! এই দুনিয়ায় কোন জিনিষ যা সবথেকে দামী, তা বিনামূল্যেই পাওয়া যায়। এর উপর কেউ সরকারী কর লাগাতে পারে না। কোন বস্তু দামী?
প্রশ্নকর্তা ও হাওয়া, জল।
দাদাশ্রী ও হাওয়াই, জল নয়। হাওয়ার উপর সরকারী কর একেবারেই নেই, কিছুমাত্র নেই। যেখানে দেখাে সেখানে, তুমি যেখানে যাও, এনিহােয়্যার, এনি প্লেস, সেখানে তুমি তা পেয়ে যাবে। প্রকৃতি তােমাকে কতটা রক্ষা করে। তুমি প্রকৃতির অতিথি আর অতিথি হয়ে তুমি চীৎকার করাে, চিন্তা করাে। এইজন্যে প্রকৃতির এরকম মনে হয় যে আরে, আমার অতিথি হয়ে আছে কিন্তু এই মানুষটা তাে অতিথি হতেও জানে না। তখন আবার রান্নাঘরে গিয়ে বলবে, ‘কটীতে লবন বেশী দেবে। আরে, অতিথি হয়ে রান্নাঘরে ঢুকছাে। ও যেমন দেবে সেরকম খেয়ে নাও। অতিথি হয়ে তুমি কি কখনও রান্নাঘরে যাও? অর্থাৎ এই অমূল্য হাওয়া বিনা মূল্যে। এরপর দ্বিতীয় স্থানে কি আসে? জল আসে। জল অল্প পয়সায় পাওয়া যায়। আর তৃতীয়স্থানে আসে খাদ্য, তাও অল্পবিস্তর পয়সায় পাওয়া যায়।
প্রশ্নকর্তা ও প্রকাশ।
দাদাশ্রী ও লাইট তাে আছেই। লাইট তাে, সূর্যনারায়ণ তােমার সেবাতেই বসে আছেন, এইভাবে সাড়ে-ছ’টায় এসে দাঁড়িয়ে পড়েন।
কোথাও ভরসাই নেই এ তাে আমাদের হিন্দুস্তানের লােকজন এত বেশী চিন্তা করে যে সূর্যনারায়ণ যদি একদিন ছুটি নেন আর বলেন কি, আর কখনও ছুটি নেব না। তাহলে দ্বিতীয় দিনই এইসব লােকেদের আশঙ্কা হবে কি কাল সূর্যনারায়ণ আসবেন কি আসবেন না? সকাল হবে নাকি হবে না। অর্থাৎ প্রকৃতির উপরও ভরসা নেই। কোন কিছুর উপর ভরসা নেই। নিজের স্ত্রী-র উপরও ভরসা নেই!
[১৫]
Page #21
--------------------------------------------------------------------------
________________
স্বয়ং-ই চিন্তাকে নিমন্ত্রণ দিয়েছো
চিন্তা করে তাও পড়শিকে দেখে। পড়শির ঘরে গাড়ি আছে আর আমার ঘরে নেই। আরে, জীবনযাপনের জন্যে কত চাই? তুমি একবার ঠিক করে নাও যে এই জিনিষ আমার দরকার। যেমন ধরো, ঘরে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার - দাবার দরকার, থাকার জন্যে ঘর দরকার, সংসার চালানোর জন্য লক্ষ্মী দরকার। তো এত তুমি পেয়েই যাবে। কিন্তু যদি পড়শির ব্যাঙ্কে দশ হাজার টাকা পড়ে থাকে তো তোমার মন খুঁতখুঁত করে। এই দুঃখ তো নিজেই ডেকে এনেছো, বোকা।
বাঁচার আধার - অহঙ্কার
ব্যাকুল তো, যখন টাকা-পয়সা অনেক আসে তখনও ব্যাকুল থাকে, চিন্তিত থাকে। এই আহমেদাবাদের মিল মালিকদের কথা যদি বলি তো তোমার মনে হবে, হে ভগবান! এরকম দশা একদিনের জন্যেও দিও না। নিষ্টি আলু যেমন উনুনে সারাদিন পোড়ে, সেইভাবে এরা পুড়তে থাকে। একমাত্র কিসের আধারে এরা বেঁচে থাকে? আমি এক শেঠজীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, “কিসের আধারে তুমি বেঁচে আছো?' তাতে বললো, ‘এতো আমারও জানা নেই।' তখন আমি বললাম, “বলবো? আমিই তো সবথেকে বড়! ব্যস্, এই আধারে বেঁচে থাকো। অন্য কোন সুখ পাও না।
অপ্রাপ্ত-এর চিন্তা করবে না
আমেদাবাদের কোন শেঠ-এর সাথে পরিচয় হয়েছিল। উনি খাওয়ার সময় কারখানায় চলে যেতেন। আমার সাথে খেতে বসেছিলেন। তখন শেঠানী (ওনার স্ত্রী) সামনে এসে বসলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “শেঠানী-জী, আপনি কেন সামনে এসে বসলেন?' তো উনি বললেন, ‘শেঠজী ঠিকমত খান না, কখনও না।' আমি বাপারটা বুঝলাম। যখন শেঠজীকে জিজ্ঞাসা করলাম তখন বললেন, “আমার সমস্ত চিত্ত ওখানে চলে যায়।' আমি বললাম, ‘এরকম কারো না। বর্তমানে খাবার থালা এসেছে, তাকে প্রথমে অর্থাৎ প্রাপ্ত
[ ১৬ ]
Page #22
--------------------------------------------------------------------------
________________
জিনিষকে ভােগ কর। অপ্রাপ্ত-র চিন্তা করাে না। যে প্রাপ্ত বর্তমানে আছে তাকে ভােগ করাে।
চিন্তা হলেও খেতে রান্নাঘরে যেতে হয় তাে? আর বেডরুমে শুতেও যেতে হয় ? আর অফিসে কাজে?
প্রশ্নকর্তা ঃ তাও যাই।
দাদাশ্রীঃ এ সমস্তই ডিপার্টমেন্ট। তাে এই একটা ডিপার্টমেন্ট-এর ঝঞ্ঝাট অন্য ডিপার্টমেন্ট-এ নিয়ে যেও না। এক বিভাগে যাও তাে তখন ওখানকার সব কাজ করে নাও। কিন্তু দ্বিতীয় বিভাগে ভােজন করতে গেলে প্রথম বিভাগের সমস্ত ঝাট ওখানেই রেখে দিয়ে খেতে বসলে স্বাদ নিয়ে খেতে পারবে। বেডরুমে গেলেও প্রথমেই ঝঞ্ঝাট যেখানকার সেখানেই রেখে যাবে। যার এরকম সেটিং করা নেই সে তাে মারা পড়বে। খাবার খেতে বসে চিন্তা করবে যে অফিসে সাহেব বকাবকি করলে কি করব? আরে, বকলে তখন দেখে নেবে। এখন আরাম করে খাও না!
ভগবান বলেছেন যে, প্রাপ্তকে ভােগ করাে, অপ্রাপ্ত-এর চিন্তা করাে না। অর্থাৎ যা পেয়েছাে তা ভােগ করাে।
বাতানুকূল-এর মধ্যেও চিন্তা প্রশ্নকর্তা আরও অনেক চিন্তা মাথায় ঘুরতে থাকে।
দাদাশ্রী ঃ খাবার খাওয়ার সময়েও চিন্তা হয়। অর্থাৎ ওই ঘন্টাটা উপরে ঝুলেই থাকে, কখন পড়বে, কখন পড়বে, কখন পড়বে!!’ এখন বলাে! এরকম ভয়ের সংগ্রহশালার নীচে বসে সমস্ত কিছু ভােগ করা! মানে এসব কি করে পােষাবে? তবু লােকে নির্লজ্জের মত ভােগও করে। যা হওয়ার হবে কিন্তু ভােগ করাে। এই সংসারে ভােগ করার মত কিছু আছে?
বিদেশে এরকম কিছু হয় না। কোন দেশে এরকম হয় না। এ সব তাে এখানেই আছে। বুদ্ধির ভান্ডার, স্তুপীকৃত বুদ্ধি, চিন্তাও স্তুপীকৃত, কারখানা খুলে বসে আছে সবাই। এই বড়-বড় কারখানা, জবরদস্ত পাখাও ঘােরে
[ ১৭ ]
Page #23
--------------------------------------------------------------------------
________________
আবার। চিন্তাও করে আর উপায়ও বের করে। আবার ওটা ঠান্ডা করে, ওকে কি বলে ?
প্রশ্নকর্তা ও এয়ারকন্ডিশন। দাদাশ্রী ঃ হ্যা, এয়ারকন্ডিশন। হিন্দুস্থানে সবই আশ্চর্য্য! প্রশ্নকর্তা ঃ এখন সব চিন্তা এয়ার কন্ডিশনেই হয়।
দাদাশ্রী ঃ হ্যা, অর্থাৎ ওরা একসাথেই হয়। এইসব চিন্তার সাথে এয়ারকন্ডিশন। আমাদের সবার এয়ারকন্ডিশনের দরকার পড়ে না।
এই আমেরিকানদের মেয়েরা সব চলে যায়। এর জন্যে ওদের খুব একটা চিন্তা হয় না, আর এখানকার লােকেদের? কারণ প্রত্যেকের ধারনা আলাদা।
| আয়ুর এক্সটেনশন পেয়েছাে?
তুমি এই পৃথিবীতে এখন দু’শাে এক বছর থাকবে তাে? এক্সটেনশন নাওনি?
প্রশ্নকর্তা ঃ এক্সটেনশন কিভাবে পাওয়া যাবে? আমার হাতে তাে কিছুই নেই, আমার তাে মনে হয় না।
দাদাশ্রীঃ কি রকম কথা বলছাে? যদি বেঁচে থাকা হাতে থাকে তাে কেউ মরবে না। যদি আয়ুর এক্সটেনশন না হয় তাে কি জন্যে চিন্তা করছাে? যা পেয়েছে সেটাই আরাম করে ভােগ কর না।।
| চিন্তাকে আমন্ত্রণ দেওয়া মনুষ্য স্বভাব চিন্তাতে তাে কাজ নষ্ট হয়। চিন্তা কাজকে শতকরা একশ’ ভাগের জায়গায় সত্তর ভাগ করে দেয়। চিন্তা কাজকে অবস্ট্রাক্ট করে (বাধা দেয়)। চিন্তা যদি হয়, তাে খুব সুন্দর পরিণাম আসে।
যেমন ধর আমি মরে যাব’ একথা সবাই জানে। কিন্তু যখন মৃত্যুর কথা মনে আসে তখন লােকে কি করে ? মনে আসলে তখন কি করে? ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। আমার কিছু হয়ে যায় যদি, এরকম মনে আসলেই ধাক্কা
[ ১৮ ]
Page #24
--------------------------------------------------------------------------
________________
মারে। এইরকমভাবে ভিতরে কোন চিন্তা হতে থাকলে তখন ধাক্কা মারবে যে এখানে নয় ভাই!
চিন্তাতে সবসময় সব কিছু খারাপ হয়। চিন্তা করতে করতে গাড়ি চালাতে গেলে ধাক্কা লাগবে। চিন্তা নিয়ে ব্যবসা করলে সেখানে কাজ উল্টো হয়। চিন্তা থেকেই সংসারে এই সমস্ত কিছু নষ্ট হয়েছে।
সংসার চিন্তা করার মতই নয়। এই সংসারে চিন্তা করা হল বেস্ট ফুলিশনেস। সংসার চিন্তা করার জন্যে নয়। এ হল ইটসেল ক্রিয়েশন (স্বয়ংসৃষ্ট)। ভগবান এর ক্রিয়েশন করেননি। এইজন্যে চিন্তা করার জন্যে এই ক্রিয়েশন নয়। শুধুমাত্র মানুষই চিন্তা করে। অন্য কোন জীব চিন্তা করে না। চুরাশী লাখ অন্য যােনি আছে কিন্তু কেউ চিন্তা-ওয়রীজ করে না। এই মনুষ্য নামক জীব প্রয়ােজনের চেয়ে বেশী বুদ্ধিমান, সেই সারা দিন চিন্তায় জ্বলতে থাকে।।
চিন্তা তাে বিশুদ্ধ ইগােইজম। এই জানােয়াররা তাে কোন চিন্তা করে না আর এই মানুষদের চিন্তা? ও হাে হাে! অনন্ত জানােয়ার আছে, কারাের চিন্তা নেই আর এই মানুষ একলাই এমন মূখ যে সারাদিন চিন্তায় জ্বলতে থাকে।
প্রশ্নকর্তা ঃ জানােয়ারের চেয়ে নিকৃষ্ট নাকি মানুষ?
দাদাশ্রীঃ জানােয়ার তাে অনেক ভালাে। জানােয়ারকে ভগবান আশ্রিত বলেছেন। এই সংসারে যদি কেউ নিরাশ্রিত হয় তাে শুধুমাত্র মানুষই আর তার মধ্যে হিন্দুস্তানের মানুষ শতকরা একশ ভাগ নিরাশ্রিত, তাহলে তার দুঃখই হবে, না কি? যার কোন রকম আশ্রয়ই নেই।।
মজুররা চিন্তা করে না আর মালিকরা চিন্তা করে। মজুর কোন চিন্তাই করে না কেননা সে উচ্চগতি লাভ করবে আর মালিক নীচ-গতিতে যাবে। চিন্তা থেকে নীচ-গতি পায় তাই চিন্তা করা অনুচিৎ।
শুধুমাত্র ওয়রীজ, ওয়রীজ, ওয়রীজ। মিষ্টি আলু যেমন আগুনে পােড়ানাে
| [ ১৯ ]
Page #25
--------------------------------------------------------------------------
________________
হয় তেমনই জগৎ পুড়ছে। মাছ তেলে ভাজা হলে যেমন হয় সেরকমই ছটফট ছটফট করছে। একে জীবন কিভাবে বলবাে?
‘আমি করছি’, এইজন্যে চিন্তা প্রশ্নকর্তা ও চিন্তা করবাে না’-এইরকম ভাবা, এটা চিন্তার অন্য রূপ নয়
কি?
দাদাশ্রী ঃ না, চিন্তা তাে ইগােইজম, শুধুই ইগােইজুম। নিজ-স্বরূপ থেকে আলাদা হয়ে ইগােইজম করে যে “আমিই চালাচ্ছি। মলত্যাগ করার শক্তি নেই আর বলে আমি চালাচ্ছি। চিন্তাই অহংকার। এই বাচ্চার চিন্তা কেন হয়
? কারণ ও জানে যে ও চালাচ্ছে না। কে চালাচ্ছে তা নিয়ে ওর কোন মাথাব্যাথা নেই।।
‘আমি করছি, আমি করছি’ এরকম করতে থাকে, তাই চিন্তা হয়।
চিন্তা-ই সবথেকে বড় অহংকার প্রশ্নকর্তা ও চিন্তাই অহংকারের প্রতীক, এটা একটু বুঝিয়ে দিন।
দাদাশ্রী ও চিন্তা অহংকারের প্রতীক কেন বলা হয় ? কারণ ওর মনে এরকম হতে থাকে যে, ‘আমিই একে চালাচ্ছি। এর থেকেই ওর চিন্তা হয়। ‘একে আমিই চালাই’ সেইজন্যে ‘এই মেয়েটার কি হবে? এই বাচ্চাদের কি হবে? এই কাজটা পুরাে না হলে কি হবে? এই সমস্ত চিন্তা নিজের মাথায়। নিয়ে নেয়। নিজেই নিজেকে কর্তা বলে মনে করে, ‘আমিই মালিক আর আমিই করছি। কিন্তু ও নিজে কর্তা নয় আর ব্যর্থ চিন্তা ঘাড়ে নিয়ে নেয়।
সংসারে থেকে যদি চিন্তাতেই থাকে আর চিন্তা দূর না হয় তাহলে ওকে কতবার জন্ম নিতে হবে! কারণ চিন্তা থেকেই জন্ম-জন্মের বন্ধন হয়।
এই সংক্ষিপ্ত কথাটা তােমাকে বলে দিচ্ছি, এই সূক্ষ্ম কথাটা তােমাকে বলে দিচ্ছি যে এই সংসারে এমন কোন মানুষ জন্মায় নি যার মলত্যাগ করারও
[ 20]।
Page #26
--------------------------------------------------------------------------
________________
স্বতন্ত্র শক্তি আছে। তাহলে এই সমস্ত লোকের ইগোইজ্জ্ম করার অর্থ কি? এ তো অন্য শক্তি কাজ করছে। এখন ওই শক্তি নিজের নয়, ওটা পরশক্তি আর স্ব-শক্তিকে জানে না, এইজন্যে স্বয়ং পরশক্তির অধীন থাকে, শুধু অধীন নয় পরাধীন থাকে। সমস্ত জন্মই পরাধীন।
মেয়ের বিয়ের চিন্তা
এখানে তো মেয়ে তিন বছরের হলেই তখন থেকে চিন্তা করতে থাকে এ বড় হয়ে গেল, বড় হয়ে গেল। বিয়ে তো কুড়ি বছরে হয় কিন্তু ছোট থাকতেই চিন্তা শুরু করে দেয়। মেয়ের বিয়ের চিন্তা কবে থেকে শুরু করা দরকার এরকম কোন শাস্ত্রে লিখেছে কি? আর কুড়ি বছরে বিয়ে দিতে হবে তো আমি চিন্তা শুরু করব কখন থেকে? দু-তিন বছরের হয়েছে, তখন থেকে? প্রশ্নকর্তা ঃ মেয়ে চৌদ্দ-পনেরো বছরের হয়ে গেলেই তো মা-বাবা চিন্তা করতে শুরু করে না!
দাদাশ্রীঃ না, তাহলেও তো পাঁচ বছর আছে না! ওই পাঁচ বছরে যে চিন্তা করছে সে মারা যাবে বা যার চিন্তা করছে সে মারা যাবে তার ঠিক কি? পাঁচ বছর বাকি থাকতে চিন্তা কি করে করতে পার?
তাও আবার অন্যের দেখে যে অমুক ভাইকে তো দেখো, মেয়ের বিয়ের কত চিন্তা করছে আর আমার তো চিন্তা নেই। তখন চিন্তা আর শুধু চিন্তাতে তরমুজের মত হয়ে যায়। আর যখন মেয়ের বিয়ের সময় আসে তখন চারআনা পয়সাও হাতে থাকে না। বেশী চিন্তা করলে পয়সা কোথা থেকে পাবে ?
তোমাকে চিন্তা কখন করতে হবে? যখন আশ-পাশের লোক বলবে যে ‘মেয়ের কিছু করলে’? তখন তুমি বুঝবে যে এখন চিন্তা করার সময় এসেছে আর তখন থেকে তার জন্যে চিন্তা শুরু করবে। এ তো আশপাশের লোকজন কিছুই বলে না আর তার আগেই, পনেরো বছর আগে থেকেই চিন্তা করতে শুরু করে। আবার নিজের স্ত্রী-কেও বলবে, ‘আমাদের মেয়ে বড় হচ্ছে আর ওর বিয়ে দিতে হবে তা কি তোমার মনে আছে?' এখন স্ত্রী-কে কেন চিন্তায় ফেলছো?
[ 21 ]
Page #27
--------------------------------------------------------------------------
________________
কুসময়ের চিন্তা সতেরাে বছর আগেই মেয়ের বিয়ের চিন্তা শুরু করে তাে মরার চিন্তা কেন করে না? তখন বলবে যে, ‘না, মরার কথা মনে করিয়ে দেবে না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘মরার কথা মনে করতে অসুবিধা কোথায় ? তুমি কি মরবে
? তাতে বলল যে, যদি মরার কথা মনে করিয়ে দাও তাহলে আজকের সুখ চলে যাবে আর আমার আজকের সমস্ত স্বাদ নষ্ট হয়ে যাবে। তাহলে মেয়ের বিয়ের কথা কেন মনে করা? তাহলেও তাে তােমার স্বাদ চলে যাবে,
? আর মেয়ে নিজের বিয়ের সবকিছু নিয়েই এসেছে। মা-বাবা তাে এতে নিমিত্তমাত্র। মেয়ে নিজের বিয়ের সমস্ত সাধন নিয়েই আসে। পয়সা, ব্যঙ্কব্যালান্স সব নিয়েই এসেছে। কম বা বেশী যা খরচ হবে এগজ্যাক্টলি সবকিছু নিয়ে আসে।।
| মেয়ের চিন্তা তােমার করার দরকার নেই তুমি মেয়ের পালকমাত্র। মেয়ে নিজের জন্যে ছেলেও নিয়ে আসে। আমার তাে কাউকে বলতে যেতে হয় না | যে ছেলের জন্ম দাও, আমার মেয়ে আছে, ওর জন্যে ছেলের জন্ম দাও, এরকম বলতে যেতে হয় কি? অর্থাৎ সমস্ত কিছুই তৈরী নিয়ে আসে। তখন বাবা বলে,
এ তাে পঁচিশ বছরের হয়ে গেল, এখনও পর্যন্ত কিছু হল না। এই, সেই...। সারাদিন এই বলতে থাকে। আরে, ওখানে ছেলে সাতাশ বছরের হয়ে গেছে, কিন্তু তুমি খুঁজে পাচ্ছ না। তাে চেঁচামেচি কেন করছাে? ঘুমােও না চুপচাপ। মেয়ে নিজের সময় এবং সবকিছু সেট করেই এসেছে।
যা তােমার ক্ষমতায় নেই তার চিত্র তৈরী করাে না। আগের জন্মের দুতিনটে ছােট-ছােট মেয়ে ছিল, ছেলে ছিল, ওদের সবাইকে এত ছােট-ছােট রেখে এসেছিলে, তাে তাদের কিছু চিন্তা করাে? কেন? আর মরার সময়ে তাে খুব চিন্তা হয় না কি, ছােট মেয়ের কি হবে? কিন্তু এখানে নতুন জন্ম নেয় আর আগের জন্মের কোন চিন্তাই থাকে না। চিঠি-পত্র কিছুই নয়!! অর্থাৎ এই সমস্ত কিছু পরসত্তা, ওতে হাত দেওয়াই উচিৎ নয়। এইজন্যে যা কিছু হচ্ছে তা ‘ব্যবস্থিত’-এ থাকলে হবে, না থাকলে হবে না।
[ ২২ ]
Page #28
--------------------------------------------------------------------------
________________
চিন্তা করার বদলে ধর্মের দিকে ফেরাে
প্রশ্নকর্তা ঃ ঘরের যে প্রমূখ ব্যক্তি, তার যে চিন্তা হয় তা কিভাবে দূর করা যাবে? | দাদাশ্রী কৃষ্ণ ভগবান বলেছেন যে, “জীব তুমি কেন চিন্তা করছাে, কৃষ্ণের যা করার তা করবে। পড়েছাে একথা? তাহলে চিন্তা করার কি দরকার? বাচ্চাদের নিয়ে ক্লেশ কেন করছাে? ধর্মের রাস্তায় ওদেরকে ঘুরিয়ে দাও, শুধরে যাবে। | কিছু লােক ব্যবসা নিয়ে চিন্তা করতেই থাকে। ওরা কেন চিন্তা করে ? এরকম মনে করে যে “আমিই চালাচ্ছি। সেইজন্যে চিন্তা হয়। কে চালাচ্ছে, এরকম কোন সাধারন অবলম্বনও নেয় না। তুমি জ্ঞান দ্বারা না জানতে পার, কিন্তু অন্য কোন অবলম্বন তাে নাও! কারণ তুমি চালাচ্ছ না এরকম কিছু কিছু তাে তােমার অনুভবে এসেছে। চিন্তা তাে সবথেকে বড় ইগােইজম।
বেশী চিন্তা কে করে ? প্রশ্নকর্তা : যার দু’বেলার রুটি জোটে না তার তাে প্রতিদিন চিন্তা হয়ই যে কাল কি করবে? কাল কি খাবে?
| দাদাশ্রী ঃ না, না, ওতাে এইরকম যে সারপ্লাসের চিন্তা থাকে, খাওয়ার চিন্তা কারাের থাকে না। সারপ্লাসেরই চিন্তা হয়। এই প্রকৃতি এমনই ব্যবস্থিত যে সারপ্লাসেরই চিন্তা। নয়তাে সবচেয়ে ছােট চারাগাছ কোথাও বেরিয়েছে তাে সেখানে গিয়েও জল ছিটিয়ে আসে। এত সমস্ত ব্যবস্থা তাে আছে। এ হল রেগুলেটর অফ দি ওয়ার্লড়। এ ওয়ার্লড়কে রেগুলেশনেই রাখে নিরন্তর। এ কোন গল্প নয়, মানে সারপ্লাসেরই চিন্তা থাকে। ওর খাওয়ার চিন্তা থাকে
।
প্রশ্নকর্তাঃ মনে হচ্ছে আপনার কাছে সমস্ত সারপ্লাসওয়ালারাই এসেছে যাদের চিন্তা হতেই থাকে। ডেফিসিটওয়ালা কেউ আসে নি।
দাদাশ্রী ? না, সেরকম নয়, ডেফিসিটওয়ালাও অনেক এসেছে কিন্তু
[ ২৩ ]
Page #29
--------------------------------------------------------------------------
________________
তাদের চিন্তা হয় না। সহজভাবে তাদের মনে হয় যে আজ এইটুকু আনবাে, তা নিয়ে আসে। অর্থাৎ যারা চিন্তা-টিন্তা করে তারা আলাদা, আর এরা তাে ভগবানকে সঁপে দেয়। তার যা ভাল লাগে তাই ঠিক’ এরকম করে চলতে দেয়। আর এরা তাে ভগবান নয়, স্বয়ংই কর্তা হয় কিনা! কর্মের কর্তাও আমি আর ভােক্তাও আমি, সেইজন্যে চিন্তা মাথায় নিয়ে নেয়।।
যেখানে চিন্তা সেখানে লক্ষ্মী থাকে? প্রশ্নকর্তাঃ এই রকম যদি হয় তাহলে তাে লােকে রােজগার করতেও যাবে না আর চিন্তাও করবে না।
দাদাশ্রী ঃ না, রােজগার করতে যায়। সেটাও ওর হাতে নেই কিনা! ও তাে লাটটু, প্রকৃতি যেমন ভাবে ঘােরাচ্ছে তেমনি ঘুরছে আর মুখে অহংকার করছে কি আমি রােজগার করতে গিয়েছিলাম। আর বিনা কারণে চিন্তা করে। যে চিন্তা করে সে টাকা কোথা থেকে আনবে? লক্ষ্মীদেবীর স্বভাব কিরকম? লক্ষ্মী যারা চিন্তা করে তাদের ওখানে ঘর করেন না। যে আনন্দে থাকে, যে ভগবানকে মনে করে, লক্ষ্মীদেবী সেখানেই যান।
| চিন্তা থেকে ব্যবসার মৃত্যু প্রশ্নকর্তা ও ব্যবসার চিন্তা হয়, অনেক বাধা আসে। দাদাশীঃ চিন্তা শুরু হলে বুঝবে কাজ আরও বেশী করে পন্ড হবে। চিন্তা হলে বুঝবে কাজ নষ্ট হবে না। চিন্তা কাজের জন্যে বাধাস্বরূপ। চিন্তা থেকে তাে ব্যবসার মৃত্যু হয়। যার ওঠা-পড়া আছে তার-ই নাম ব্যবসা, ও তাে পূরণগলন। যার পূরণ হয়েছে তার গলন না হয়ে যায় না। এই পূরণ-গলনে তােমার কোন ধনসম্পত্তি নেই। আর তােমার যা ধনসম্পদ তাতে কোন পুরণ-গলন হয় না। এই রকমই শুদ্ধ ব্যবহার! তােমার ঘরে তােমার স্ত্রী-পুত্র সবাই তােমার পার্টনার নয় কি?
প্রশ্নকর্তাঃ সুখ-দুঃখ ভুগবার সময়ে থাকে।
[ ২৪ ]
Page #30
--------------------------------------------------------------------------
________________
দাদাশ্রী ঃ তুমি তোমার স্ত্রী-পুত্রের অভিভাবক । শুধুমাত্র অভিভাবক-কেই কেন চিন্তা করতে হবে? আর ঘরের লোকজন তো উল্টো বলে যে তুমি আমাদের চিন্তা কোরো না। চিন্তা থেকে কিছু বাড়ে কি?
প্রশ্নকর্তা ঃ বাড়ে না ।
দাদাশ্রী ঃ বাড়ে না? তাহলে ওরকম ভুল ব্যবসা কে করবে? যদি চিন্তা থেকে বাড়ে তো করো ৷
এটা বুঝলে চিন্তা যাবে
ব্যবসা করতে হলে বুকের জোর চাই। বুকের জোর চলে গেলে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। জ্ঞান হওয়ার আগে আমার কোম্পানিতে একবার লোকসান হয়েছিল। তখন আমার সারা রাত ঘুম এল না, চিন্তা হতে থাকলো। তারপর ভিতর থেকে জবাব এল যে এই চিন্তা এখন কে কে করছে? আমার মনে হল আমার ভাগীদার হয়তো চিন্তা করছে না। শুধু আমি একলাই চিন্তা করছি। আর স্ত্রী-পুত্র সবাই ভাগীদার, কিন্তু ওরা তো কিছু জানেই না। এখন ওদের কিছু না জেনেই চলে যাচ্ছে, তাহলে আমি একাই কম বুদ্ধি সম্পন্ন যে এই সমস্ত চিন্তা করছি। তখন আমার বুদ্ধি খুলে গেলো। কারণ এরা সবাই ভাগীদার, কিন্তু কেউ চিন্তা করে না। তাহলে আমি একা কেন চিন্তা করব?
বিচার করো কিন্তু চিন্তা করো না
চিন্তা মানে কি সেটা বুঝে নিতে হবে যে মনে বিচার এইরকম উঠছে। আমি কোন কিছু ব্যাপারে, ব্যবসা সম্বন্ধে, অন্য কোন কিছু সম্বন্ধে অথবা কোন অসুখ হয়েছে আর এসব কিছুর বিচার আসছে, কিছুদূর পৌঁছানোর পর ওই বিচার আমাকে চক্রব্যূহে ফেলে দেয় আর চক্রে ফেলে দিলে বুঝতে হবে যে এ উল্টো রাস্তায় চলছে, মানে খারাপ হয়ে গেছে। সেখান থেকেই আবার চিন্তা সুরু হয়ে যায়।
[ 25 ]
Page #31
--------------------------------------------------------------------------
________________
বিচার করতে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু বিচার মানে কি? একটা ভাবনা শুরু হল আর একটা সীমার পর তা আরও চললে তখন তাকে চিন্তা বলে। সীমার মধ্যেই ভাবা দরকার। বিচারের নালিটী কি? ভেতরে তরঙ্গ না ওঠে ততক্ষণ পর্যন্ত। তরঙ্গ উঠতে থাকলে তখন বন্ধ করে দেওয়া। তরঙ্গ উঠতে থাকলে চিন্তা শুরু হয়ে যায়। এটা আমার আবিষ্কার।
চিন্তা করার অধিকার নেই। ভাবার অধিকার আছে, কি ভাই, এই পৰ্য্যন্ত ভাববে আর ভাবনা যখন চিন্তায় পরিনত হয় তখন বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ। এই অ্যাবাভ-নর্মাল বিচারকেই চিন্তা বলে। এই জন্যে আমি ভাবি কিন্তু যদি অ্যাবাভ-নর্মাল হয়ে যায়, পেটে গুড়গুড় করে তখন বন্ধ করে দিই।
প্রশ্নকর্তা ও সাধারনভাবে ভিতরে দেখতে থাকে ততক্ষণ বিচার বলে আর ভিতরে চিন্তা হতে থাকলে তার প্রভাবে এসে গেছে এরকম বলা যায়। | দাদাশ্রী ও চিন্তা হওয়া মানেই তার প্রভাব এসে যায়। চিন্তা হওয়া মানে ধরে নেওয়া যে আমার কারণেই চলছে, এইরকম মনে করা। এ তাে এইরকমই, এ সব ঝাটে পড়াই উচিৎ নয়। সব মানুষের মধ্যে এই রােগ ঢুকে গেছে; এখন সহজে বেরােবে কি? তাড়াতাড়ি তাে বেরােবে না। অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, সে তাে যাবে না! হ্যাবিচ্যুয়েটেড।।
প্রশ্নকর্তা : আপনার কাছে এলে বেরিয়ে যাবে না? দাদাশ্রীঃ হ্যা, বেরিয়ে যায় কিন্তু ধীরে ধীরে বেরােয়। একদম চলে যায় ।।
যেখানে পরসত্তা হাতে নেয়, সেখানে চিন্তা তােমার কিরকম চলে? কখনও অশান্তি হয় কি? চিন্তা হয় ?
প্রশ্নকর্তাঃ এই আমার বড় মেয়ের বিয়ের কথা পাকা হচ্ছে না, সেইজন্যে অশান্তি হয়।
দাদাশ্রী ঃ তােমার হাতে যদি থাকে তাে অশান্ত থাকো না, কিন্তু এ কি তােমার হাতে আছে? নেই? তাে কেন শুধু শুধু অশান্তি ভােগ করাে? তাহলে কি এই শেঠজীর হাতে আছে? এই বােনের হাতে আছে?
[ ২৬ ]
Page #32
--------------------------------------------------------------------------
________________
প্রশ্নকর্তা ঃ না। | দাদাশ্রীঃ তাে কার হাতে আছে না জেনেই অশান্তি ভােগ করলে সেটা এইরকম হয় যে টাঙ্গা চলছে, তাতে আমরা দশজন বসে আছি, দুই বড় বড় ঘােড়ার গাড়ী, চালক তাকে চালাচ্ছে আর তুমি ভিতরে বসে চীৎকার করছ, ‘অ্যাই, এইভাবে চালাও, অ্যাই, এইভাবে চালাও, তাহলে কি রকম হবে? যে চালাচ্ছে তাকে দ্যাখাে না! কে চালাচ্ছে সেটা জানলে আর চিন্তা হবে না। তুমি রাত-দিন চিন্তা করাে? কতদিন করবে? এর শেষ কোথায় আমাকে বলাে।
মেয়ে তাে নিজেরটা নিয়েই এসেছে, তুমি কি তােমারটা নিয়ে আসাে নি ? এই শেঠজীকে তুমি পেয়েছাে না পাওনি? তুমি যদি শেঠজীকে পেয়ে থাকো তাে এই মেয়ে কেন পাবে না? তুমি একটু ধৈৰ্য্য তাে রাখাে। বীতরাগ মার্গে চলছাে আর একটুও ধৈৰ্য্য না রাখলে তাে আর্তধ্যান হবে, রৌদ্রধ্যান হবে।
প্রশ্নকর্তা ও এরকম নয় কিন্তু স্বাভাবিক ভাবনা তাে হয়ই, না!
দাদাশ্রী ঃ এই স্বাভাবিক ভাবনা, একেই আর্তধ্যান আর রৌদ্রধ্যান বলে, ভিতরের আত্মাকে কষ্ট দিয়েছি আমি। আর কাউকে দুঃখ না দিয়েছাে তাে ঠিক আছে কিন্তু এ তাে আত্মাকে দুঃখ দিয়েছে।
চিন্তা থেকে অন্তরায় কর্মের বন্ধন চিন্তা করলে তাে অন্তরায় কর্ম করা হয় আর কাজ বিলম্বিত হয়। তােমাকে বলেছে যে অমুক জায়গায় ছেলে আছে, তাে তুমি চেষ্টা করাে। চিন্তা করতে ভগবান বারণ করেছেন। চিন্তা করলে তাে অধিক অন্তরায় হয় আর বীতরাগ ভগবান বলেছেন, “ভাই, তুমি যদি চিন্তা করছাে তাে তুমিই মালিক? তুমিই দুনিয়া চালাও? আর ভাবতে গেলে তাে বােঝা যায় যে নিজের মলত্যাগ করারও স্বতন্ত্র শক্তি নেই। ও তাে যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন ডাক্তার ডাকতে হয়। ততক্ষণ পর্যন্ত এই শক্তি আমারই আছে এরকম মনে হয়। কিন্তু ওই শক্তি নিজের নয়। ওই শক্তি কিসের অধীন, তা জানা প্রয়ােজন কি না?
একে কে চালায়? বােন, তুমি তাে জান, না কি? শেঠজীও জানেন কি?
[ ২৭ ]
Page #33
--------------------------------------------------------------------------
________________
কেউ চালায় নাকি তুমিই চালাও?
সংযােগ চালায়.... | কর্তা কে? এই সংযােগ-ই কর্তা। এই সমস্ত সংযােগ, সায়েন্টিফিক সারকামস্ট্যান্সিয়াল এভিডেন্স একত্র হলে তবেই কাজ হতে পারবে। তাহলে তােমার হাতে সত্ত্বা নেই। তােমার তাে সংযােগ-কে নিরীক্ষণ করতে হবে যে সংযােগ কিরকম আছে। সংযােগ একত্র হলে তাে কাজ হয়েই যাবে। কেউ যদি মার্চ মাসে বর্ষার আশা করে তাহলে তাকে ভুল বলতে হবে। আর জুনের পনেরাে তারিখ এলেই সংযােগ একজোট হতে শুরু করে। সময়ের সংযােগ একসাথে হল কিন্তু মেঘের সংযােগ হল না, তাে বিনা মেঘে বর্ষা কি করে হবে? মেঘ জমেছে, সময়ও এসে গেছে, বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, অন্য এভিডেন্স একত্র হয়েছে, তাে বর্ষা হবেই। অর্থাৎ সংযােগ হওয়া চাই। মানুষ সংযােগাধীন, কিন্তু নিজে এরকম ধারণা করে নেয় যে, আমি কিছু করছি। কিন্তু এই কর্তা হওয়াও সংযােগাধীন। একটা সংযােগ-ও যদি সরে যায় তাহলে ওর দ্বারা সেই কাজ হবে না।
‘আমি কে’ এটা জানলে চিরদিনের জন্যে সমাধান প্রকৃতপক্ষে ‘আমি কে’ তা তাে জানা জরুরী, স্বয়ং নিজের উপর বিজনেস করলে তা সাথে আসবে। অন্য নাম-এর উপর বিজনেস করলে আমার হাতে কিছুই থাকবে না। একটু-আধুটু তাে বুঝতে হবে, না কি? আমি কে তা জানতে হবে না!
এখানে তােমাকে সমাধান দিয়ে দিচ্ছি তারপরে আর চিন্তা-ওয়রীজ কিছু কখনও হবে না। চিন্তা হলে সেটা পছন্দ হয় ? কেন পছন্দ হয় না ?
অনন্ত কাল থেকে এই জীব ঘুরপাক খাচ্ছে, অনন্ত কাল থেকে। তখন কোন সময়ে কোন-কোন বার এইরকম প্রকাশ-স্বরূপ জ্ঞানীপুরুষের সাক্ষাৎ হয়, তখন মুক্তি পাইয়ে দেন।
[ ২৮ ]
Page #34
--------------------------------------------------------------------------
________________
| টেনশন আলাদা! চিন্তা আলাদা! প্রশ্নকর্তা ও তাে এই চিন্তার সাথে অহঙ্কার কিভাবে থাকে ?
দাদাশ্রী ? আমি না থাকলে চলবে না, এইরকম ওর মনে হয়। এটা আমিই করছি, আমি না করলে এটা হবে না, কখন এটা হবে, সকালে কি হবে? এরকম করে চিন্তা করে।
প্রশ্নকর্তা ও চিন্তা কাকে বলে?
দাদাশ্রী ঃ কোন কিছুকে সর্বস্ব মনে করে তার চিন্তন করা, তাকেই চিন্তা বলে। স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছে, এখন পয়সার থেকেও বেশী যদি স্ত্রী-ই তার কাছে সর্বস্ব, তাে সেখান থেকে চিন্তা শুরু হয়। ওকে সব থেকে বেশী মহত্ত্ব দিয়েছে, এইজন্যে চিন্তা ঢুকে যায়। আর যার জন্যে আত্মাই সর্বস্ব, তার আর কিসের চিন্তা হবে?
প্রশ্নকর্তা ও টেনশন মানে কি? চিন্তা তাে বুঝতে পেরেছি এখন টেনশনএর ব্যাখ্যা দিন যে টেনশন কাকে বলে?
| দাদাশ্রী ঃ টেনশন ওর মতই ভাগ। কিন্তু ওতে সর্বস্ব হয় না, সব রকমের অশান্তি হয়। চাকরির কোন ঠিকানা নেই, কি হবে? একদিকে স্ত্রী অসুস্থ, তার কি হবে? ছেলে ঠিকমত স্কুলে যায় না, তার কি? এই সমস্ত অশান্তিকে টেনশন বলে। আমি তাে সাতাশ বছর ধরে টেনশন-ই দেখিনি।
এখন সাবধান থাকা আর চিন্তার মধ্যে অনেক পার্থক্য। সাবধানে থাকা তাে জাগৃতি আর চিন্তা মানে জ্বলতে থাকা।
নালিটী থেকেই মুক্তি প্রশ্নকর্তা ও পরনির্ভরশীলতা আর চিন্তা, দুটো এক নয়?
দাদাশ্রী ও চিন্তা তাে অ্যাবাভ-নৰ্মাল ইগােইজম, পরবশতা ইগােইজম নয়। পরবশতা মানে অনন্যোপায় হওয়া আর চিন্তা তাে অ্যাবাভ-নর্মাল ইগােইজম। অ্যাবাভ-নৰ্মাল ইগােইজম থাকলে চিন্তা হবে নয়তাে হবে না। এই রাতে ঘরে কার ঘুম আসছে না? তখন বলে যার ইগােইজম বেশী তার।
| [ ২৯ ]
Page #35
--------------------------------------------------------------------------
________________
ইগােইজম ব্যবহার করতে বলেছে, অ্যাবাভ-নৰ্মাল ইগােইজুম ব্যবহার। করতে বলেনি। অর্থাৎ চিন্তা করা দোষ আর তার পরিণাম জানােয়ার গতি।
প্রশ্নকর্তা ও চিন্তা না হয়, তার জন্যে কি উপায় আছে?
দাদাশ্রী ঃ পিছনে ফেরা। পিছনে ফেরা চাই অথবা ইগােইজম একেবারে শেষ করে দেওয়া চাই। জ্ঞানীপুরুষ বর্তমান, জ্ঞানীপুরুষ ‘জ্ঞান’ দিলে সব হয়ে যায়।।
চিন্তা কিভাবে যাবে?
প্রশ্নকর্তা ও চিন্তা কেন যায় না? চিন্তা মুক্ত হওয়ার জন্য কি করতে হবে?
দাদাশীঃ চিন্তা বন্ধ হয়েছে এরকম মানুষ পাবেই না। কৃষ্ণ ভগবানের ভক্তেরও চিন্তা বন্ধ হয় না! আর চিন্তা থেকেই সমস্ত জ্ঞান অন্ধ হয়ে যায়, ফ্র্যাকচার হয়ে যায়।
সংসারে একজন মানুষও এমন নেই যার চিন্তা হয় না। সাধু-সন্ন্যাসিনী সবারই কখনাে না কখনাে চিন্তা তাে হয়ই। সাধুর তাে ইনকাম-ট্যাক্স নেই, না ভাড়া দিতে হয় তবু কখনও না কখনও চিন্তা হয়ে যায়। শিষ্যের সাথে ঝঞ্ঝাট হলেও চিন্তা হয়ে যায়। আত্মজ্ঞান ছাড়া চিন্তা দূর হয় না।
এক ঘন্টায় তাে তােমার সমস্ত চিন্তা আমি নিয়ে নিই আর গ্যারান্টী দিই যে যদি একটা চিন্তাও আর হয় তাে উকিল দিয়ে আদালতে আমার উপর কেন্স চালাবে। এইভাবে আমি হাজার হাজার লােককে চিন্তা রহিত করে দিয়েছি। আরে চাও ! যা চাইবে তাই দেব কিন্তু একটু ঠিকভাবে চাও। এমন কিছু চাও যা তােমার কাছ থেকে কখনও চলে যাবে না। এই সমস্ত বিনাশী জিনিস চেয়াে। না। শাশ্বত সুখ চেয়ে নাও।।
আমার আজ্ঞায় থাকো আর একটাও চিন্তা হয় তাে দাবী করার ছাড় দিয়েছি। আমার আজ্ঞাতে থাকবে। এখানে সব কিছু পাওয়া যাবে এরকম ব্যাপার। ওদের সবার সাথে কি শর্ত রেখেছি তুমি জানাে কি? একটাও চিন্তা হলে আমার উপর দু’লাখ টাকা দাবী করবে।
[৩০]
Page #36
--------------------------------------------------------------------------
________________
প্রশ্নকর্তা ঃ আপনার কাছ থেকে জ্ঞান পেয়েছি, মন-বচন-কায়া আপনাকে অর্পণ করেছি, আর চিন্তা হয়ই না।
দাদাশীঃ হবেই না।
চিন্তা দূর হয়েছে, তার-ই নাম সমাধি। এতে আগের থেকে কাজও বেশী হবে, কারণ অশান্তি থাকবে না তাে! অফিসে গিয়ে বসলেই কাজ হতে থাকবে। ঘরের বিচার আসে না, বাইরের বিচার আসে না, কোন প্রকারের বিচারই আসে না আর সম্পূর্ণ একাগ্রতা থাকে।
বর্তমানে থাকে সেই ঠিক কারাের যদি তিন বছরের একমাত্র মেয়ে থাকে, তার মনে এরকম চিন্তা হয় যে এ বড় হলে এর বিয়ে দিতে হবে, তাতে খরচা হবে। এরকম চিন্তা করতে বারণ করা হচ্ছে। কারণ যখন ওর সময় হবে তখন সমস্ত এভিডেন্স (সংযােগ) একজোট হয়ে যাবে। এইজন্যে সময় না আসা পর্যন্ত তুমি ওতে হাত দিও না। তুমি নিজের মত করে মেয়েকে খাওয়া-দাওয়াও, লেখা-পড়া শেখাও কিন্তু ভবিষ্যতের সব চিন্তা করতে যেও না, আজকের দিন, বর্তমানের ই করাে। অতীত তাে চলে গেছে। যা তােমার অতীত তাকে কেন খোঁড়াখুঁড়ি করছ? একে খুঁড়তে নেই! অতীত তাে চলে গেছে, তাকে তাে কোন মুখ মানুষও খুঁড়ে বার করে না। ভবিষ্যৎ ব্যবস্থিত-এর হাতে, তাই আমাদের বর্তমানেই থাকা উচিৎ। এখন চা খাওয়ার থাকে তাে আরাম করে চা খাও, কারণ ভবিষ্যৎ ব্যবস্থিত-এর হাতে। আমার ঝঞ্ঝাট কোথায়? এইজন্যে বর্তমানেই থাকবে। যখন খাবার খাবে তখন খাওয়াতে সম্পূর্ণ চিত্ত রেখে খাওয়া উচিৎ। পকোড়া কি দিয়ে তৈরী হয়েছে, এ সমস্ত ধীরে-সুস্থে জানাে। বর্তমানে থাকা এর অর্থ হল হিসাবের বই একদম একুরেট, ওতেই চিত্ত থাকা উচিৎ। কারণ চিত্ত যদি ভবিষ্যতে চলে যায় তাে আজকের হিসাবের বইয়ে বিঘ্ন ঘটবে। কেননা ভবিষ্যতের বিচার খচখচ্ করে আর তাতে আজকের হিসাব নষ্ট হয়ে যায়। ভুল-ভ্রান্তি হয়ে যায়। কিন্তু যে বর্তমানে থাকে তার একটাও ভুল হয় না, তার চিন্তাও হয় না।
[৩১]
Page #37
--------------------------------------------------------------------------
________________
চিন্তা, এ ডিচার্জ নয় প্রশ্নকর্তা ও চিন্তা কি ডিস্টার্জ?
দাদাশীঃ চিন্তা ডিচার্জে পড়ে না, কারণ ওতে ‘কর্তা’ থাকে। যে চিন্তা চার্জরূপে ছিল, সেটা এখন ডিস্টার্জরূপে আছে, তাকে আমি সাফোকেশন বলি। কারণ ভিতরে স্পর্শ করতে দেয় না! আত্মা অহংকার থেকে আলাদা থাকে! যখন একাকার হতাে, তখন চিন্তা ছিল।
এখন যে সাফোকেশন আছে, তা চার্জ হওয়া চিন্তা। ওর ডিচার্জ হওয়ার সময়ে সাফোকেশন হয়। যেমন চার্জ হয়েছিল ক্রোধ কিন্তু আত্মা আলাদা হয়ে যাওয়াতে ডিসচার্জ হওয়ার সময়ে তা গুসা হয়ে যায়। এইভাবে যাতে যাতে আত্মা আলাদাভাবে থাকে সে সব আলাদাই। অর্থাৎ এই জ্ঞান পাওয়ার পরে চিন্তা হয়ই না, ওটা শুধুই সাফোকেশন। চিন্তাযুক্ত চেহারা বােঝা যায়। এ যা হচ্ছে তা শুধু সাফোকেশন, দমবন্ধ করা অবস্থা।
তােমাকে রাস্তা এঁকে দেওয়া হয়েছে আর তা বুঝতে তােমার ভুল হয়ে গেছে, তাে তােমার ব্যাকুলতা হবে, একে চিন্তা বলে না। একে দমবন্ধ করা অবস্থা বলে। অর্থাৎ চিন্তা হবে না। চিন্তাতে তাে চড়চড় করে রক্ত জ্বলতে থাকে!
‘ব্যবস্থিত’-এর জ্ঞান, সেখানে চিন্তা গায়েব প্রশ্নকর্তা ও ব্যবস্থিত’ যদি ঠিকমতাে বােঝা যায় তাহলে চিন্তা অথবা টেনশন কিছু থাকবে না?
দাদাশ্রী ও একটুও থাকে না। ব্যবস্থিত’ মানে সায়েন্টিফিক সারকামস্ট্যানশিয়াল এভিডেন্স। ব্যবস্থিত’কে সেই পৰ্য্যন্ত বুঝতে হবে যে অন্তিম পর্যায়ে ব্যবস্থিত’ ‘কেবলজ্ঞান’ উৎপন্ন করে আর ব্যবস্থিত বুঝলে তাে কেবলজ্ঞান ও বােঝা যাবে। এই ‘ব্যবস্থিত’ আমার এত সুন্দর আবিষ্কার! এ এক আশ্চর্য্য আবিষ্কার!!
অনন্ত জন্ম ধরে সংসার কে তৈরী করছিল ? কর্তা হয়ে বসেছিলে, তারই চিন্তা।
প্রশ্নকর্তা ঃ এই ‘জ্ঞান থেকে এখন আমার ভবিষ্যতের চিন্তা হয় না। দাদাশ্রীঃ তুমি তাে ‘এ ব্যবস্থিত’ এরকম বলে দাও! ব্যবস্থিত তুমি বুঝতে
[ ৩২ ]
Page #38
--------------------------------------------------------------------------
________________
| পেরেছাে তাে! কোন পরিবর্তন হওয়ার নয়। সারা রাত জেগে দু’বছর পরের কথা ভাবলে তা হল ইউজলেস বিচার, ওয়েস্ট অফ টাইম এন্ড এনার্জী।
প্রশ্নকর্তা ঃ আপনি যে রিয়েল’ আর ‘রিলেটিভ’ বুঝিয়েছেন, তার পরে চিন্তা দূর হয়ে গেছে।
দাদাশ্রী ও পরে তাে আর চিন্তাই হয় না! এই জ্ঞানের পরে চিন্তা হবে এরকম নয়ই। এই পথ সম্পূর্ণ বীতরাগ পথ। সম্পূর্ণ বীতরাগ পথ মানে কি, যে চিন্তা হবেই না। এ সমস্ত আত্মজ্ঞানীর, চব্বিশ তীর্থঙ্করের পথ, এ আর অন্য কারাের পথ নয়।
- জয় সচ্চিদানন্দ
[[ ৩৩ ]
Page #39
--------------------------------------------------------------------------
________________
দাদা ভগবান ফাউন্ডেশন দ্বারা প্রকাশিত হিন্দী পুস্তকসমূহ
২৪ মানব ধর্ম ১. জ্ঞানীপুরুষ কি পহেচান
২৫ সেবা-পরােপকার ২. সর্ব দুঃখে সে মুক্তি
২৬ মৃত্যু সময়, পহেলে ঔর পশ্চাৎ ৩. কর্ম কে সিদ্ধান্ত
২৭ নিজদোষ দর্শন সে.নির্দোষ ৪. আত্মবােধ
২৮ পতি-পত্নী কা দিব্য ব্যবহার ৫. ম্যাঁয় কৌন হুঁ?
২৯ ক্লেশ রহিত জীবন ৬. বর্তমান তীর্থঙ্কর শ্রী সীমন্ধর স্বামী
৩০. গুরু-শিষ্য ৭. ভুগতে উসি কি ভুল।
৩১. অহিংসা ৮. অ্যাডজাস্ট এভরিহােয়্যার
৩২. সত্য-অসত্য কে রহস্য ৯. টকরাও টালিয়ে
৩৩. চমৎকার হুয়া সাে ন্যায়।
৩৪. পাপ-পুণ্য ১১. চিন্তা
৩৫. বাণী, ব্যবহার মে... ১২. ক্রোধ
৩৬. কর্ম কে বিজ্ঞান ১৩. প্রতিক্ৰমণ ।
৩৭. আপ্তবাণী ১ ১৪. দাদা ভগবান কৌন ?
৩৮. আপ্তবাণী ২ ১৫. প্যয়সে কা ব্যবহার।
৩৯. আপ্তবাণী ৩ ১৬. অন্তঃকরণ কা স্বরূপ
৪০. আপ্তবাণী ৪। ১৭. জগৎ কর্তা কৌন ?
৪১. আপ্তবাণী ৫ ১৮. ত্রিমন্ত্র ।
৪২. আপ্তবাণী ৬ ১৯. ভাবনা সে সুধরে জন্মেজন্ম। ৪৩. আপ্তবাণী ৭ ২০. মাতা-পিতা ঔর বস্ফো কা ব্যবহার ৪৪. আপ্তবাণী ৮ ২১. প্রেম
৪৫. আপ্তবাণী ১৩ (পুর্বার্ধ)। ২২. সমঝ সে প্রাপ্ত ব্রহ্মচর্য (সংক্ষিপ্ত) ৪৬. সমঝ সে প্রাপ্ত ব্রহ্মচর্য (পুর্বার্ধ) ২৩. দান
৪৭. সমঝ সে প্রাপ্ত ব্রহ্মচর্য (উত্তরা)
* দাদা ভগবান ফাউন্ডেশন দ্বারা গুজরাতী ভাষাতেও ৫৫টি পুস্তক প্রকাশিত হয়েছে। ওয়েবসাইট
www.dadabhagwan.org থেকেও এই সমস্ত পুস্তক প্রাপ্ত করা যায়। * দাদা ভগবান ফাউন্ডেশন দ্বারা “দাদাবানী” মাসিক পত্রিকা হিন্দী, গুজরাতী এবং ইংরাজী ভাষায়
প্রকাশিত হয়।।
| [ ৩৪ ]
Page #40
--------------------------------------------------------------------------
________________
সম্পর্ক সূত্র দাদা ভগবান পরিবার
অডালজ ও ত্রিমন্দির, সীমন্ধর সিটী, অহমদাবাদ - কলােল হাইওয়ে, পাের।
অডালজ, জিলা - গাঁধীনগর, গুজরাত - 382421 ফোন ঃ (079) 39830100, e-mail : info@dadabhagwan.org
রাজকোট ও ত্রিমন্দির, অহমদাবাদ - রাজকোট হাইওয়ে, তরঘড়িয়া চৌকড়ী,
পােঃ মালিয়াসন, জিলা - রাজকোট, ফোন ঃ 9924343478
ত্রিমন্দির, হিল গার্ডেন-এর পিছনে, এয়ারপাের্ট রােড, ফোন ঃ - (02832) 290123.
মােরবী ও ত্রিমন্দির, মােরবী - নলখী হাইওয়ে, পােঃ জেপুর, তালুকা
মােরবী, জিলা - রাজকোট, ফোন ঃ (02822) 297097
সুরেন্দ্রনগর ও
| ত্রিমন্দির, সুরেন্দ্রনগর – রাজকোট হাইওয়ে, লােকবিদ্যালয়-এর নিকট, মুলী রােড, ফোন ঃ 9737048322
অমরেলী ও ত্রিমন্দির, লীলীয়া বাইপাস চৌকড়ী, খারাবাড়ী, ফোন ঃ
9924344460
গােধরা
: ত্রিমন্দির, ভামৈয়া গাঁও, এফ সি আই গােডাউন-এর সামনে, গােধরা
জিা-পঞ্চমহাল, ফোন ঃ (02672) 262300.
আহমদাবাদ।
দাদা দর্শন, ৫, মমতাপার্ক সােসাইটি, নবগুজরাত কলেজের পিছনে, উসমানপুরা, আহমদাবাদ -380014 ফোন ঃ (079) 27540408
বড়ােদরা ও দাদা মন্দির, ১৭ মামা-কি-পােল মুহল্লা, রাওপুরা থানার সামনে,
সলাটবাড়া, বড়ােদরা, ফোন ঃ 9924343335
Page #41
--------------------------------------------------------------------------
________________
ܘܘ
oo.
ܘܘ
oo
ܘܘ
oo
ܘܘ
মুম্বাই ? কোলকাতা ঃ জয়পুর ঃ ইন্দৌর : রায়পুর : পাটনা : বেঙ্গলুর ঃ পুনে ?
9323528901 9830093230 9351408285 9039936173 9329644433 7352723132 9590979099 9422660497
দিল্লী : চেন্নাই : ভােপাল ঃ জব্বলপুর : ভিলাই : অমরাবতী ঃ হায়দ্রাবাদ : জলন্ধর :
9810098564 9380159957 9425024405 9425160428 9827481336 9422915064 9989877786 9814063043
ܘܘ
oc
ܘܘ
oo
ܘܘ
| oo
ܘܘ
U.S.A.
:
U.K. : Kenya UAE Australia : New Zealand : Singapore :
DBVI Tel. : +1 877-505-DADA (3232), Email : info@us.dsdabhagwan.org +44 330-111-DADA (3232) +254 722 722 063 +971 557316937 +61 421127947 +64 21 0376434 +65 81129229 www.dadabhagwan.org
Page #42
--------------------------------------------------------------------------
________________ চিন্তা কার্য্যের পক্ষে অবরােধক | চিন্তা হলে ঝবে যে কাজে বিঘ্ন ঘটবে। চিন্তা না হলে বুঝবে জে বিঘ্ন আসবে না। চিন্তা কাজের পক্ষে অবরােধক। চিন্তা থেকে তাে ব্যবসার মৃত্যু হয়। কিছু লােক ব্যবসার চিন্তা করতেই থাকে। ওরা চিন্তা কেন করে? ওরা এরকম মনে করে যে, ‘আমি-ই চালাচ্ছি, এইজন্যে চিন্তা হয়। একে কে চালায় এরকম কিছু, কোন প্রকারের সাধারন অবলম্বনও নেয় না। চিন্তা তাে সব থেকে বড় ইগােইজম। SONO 332 04 978388 32t4 Printed in India dadabhagwan.org Price 10